রাজস্থানে অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেলের পদে পদ্মেশ মিশ্রের নিয়োগ সম্পর্কিত রাজস্থান হাইকোর্টের রায়

:

 রাজস্থানে অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেলের পদে পদ্মেশ মিশ্রের নিয়োগ সম্পর্কিত রাজস্থান হাইকোর্টের রায়

২০২৫ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি, রাজস্থান হাইকোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় প্রদান করেছে_ যেখানে রাজস্থানের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল পদে পদ্মেশ মিশ্রের নিয়োগ চ্যালেঞ্জকারী একটি পিটিশন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।  যদিও এই মামলাটি রাজস্থান রাজ্য লিগ্যাল লিটিগেশন নীতি ২০১৮ এর নির্দিষ্ট বিধি এবং রাজস্থানের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল পদে আইনজীবীদের নিয়োগের শর্তাবলী নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্নের মধ্যে ছিল। পিটিশনার, সুনীল সামদারিয়া, নিজেই একজন আইনজীবী ছিলেন, যিনি সংবিধানের আর্টিকেল ২২৬ এর অধীনে একটি পিটিশন দায়ের করেছিলেন, যেখানে তিনি পদ্মেশ মিশ্রের নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, কারণ তাঁর মতে মিশ্র প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করেননি।

মামলাটি যখন শুরু হয়েছিল, সুনীল সামদারিয়া তাঁর পিটিশনে দাবি করেছিলেন যে, পদ্মেশ মিশ্র অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল পদে নিয়োগের জন্য রাজস্থান রাজ্য লিটিগেশন নীতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ১০ বছরের আইনগত অভিজ্ঞতা পূর্ণ করেননি। তিনি বিশেষ করে ২০২৪ সালের ২৩শে আগস্ট, রাজস্থান রাজ্য লিটিগেশন নীতিতে সন্নিবেশিত সংশোধনী ক্লজ ১৪.৮-কে উল্লেখ করেছিলেন, যা রাজ্য সরকারকে অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল পদে কোনও আইনজীবী নিয়োগের ক্ষমতা প্রদান করেছিল, তাদের বিশেষ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। সামদারিয়া অভিযোগ করেছিলেন যে এই সংশোধনীর মাধ্যমে শুধু পদ্মেশ মিশ্রের নিয়োগকে সুনিশ্চিত করা হয়েছে, এবং এটি একটি বেআইনি পদক্ষেপ যা প্রতিপক্ষের প্রতি পক্ষপাতিত্বের স্ফূর্তির ফল। তিনি এও দাবি করেছিলেন যে, সংশোধনীটি কেবলমাত্র মিশ্রকে উপকৃত করার জন্য প্রবর্তিত হয়েছে এবং এর মাধ্যমে রাজ্যের নীতি চূর্ণ করা হয়েছে।

এই মামলাটি যখন রাজস্থান হাইকোর্টে উপস্থিত হয়েছিল, তখন বিচারক সুধেশ বানসাল এর নেতৃত্বে হাইকোর্টের বেঞ্চ বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করেন এবং রাজস্থান রাজ্য লিটিগেশন নীতি ২০১৮ এর বিভিন্ন দিক এবং সংশ্লিষ্ট বিধি ব্যাখ্যা করেন। এটি ছিল মূলত বিতর্কিত বিষয় যে, অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল পদে নিয়োগের জন্য ১০ বছরের অভিজ্ঞতা কি একটি বাধ্যতামূলক শর্ত ছিল, নাকি এটি নীতির সংশোধনীর পর একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরিবর্তনযোগ্য ছিল। আদালত পর্যবেক্ষণ করেন যে, রাজস্থান রাজ্য লিটিগেশন নীতি অনুযায়ী ক্লজ ১৪.৪-এ বলা হয়েছে যে, অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল পদে নিয়োগের জন্য ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। তবে আদালত মনে করেন যে এই শর্তটি একটি বাধ্যতামূলক নিয়ম ছিল না, এবং রাজ্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্যান্য মানদণ্ড যেমন আইনজীবীর দক্ষতা, আইনি পরিপক্বতা এবং পরামর্শ দেওয়ার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিয়োগ করা যেতে পারে।

আদালত আরও বিশ্লেষণ করে ক্লজ ১৪.৮, যা ২০২৪ সালে সংশোধিত হয়েছে, এবং এটি রাজ্য সরকারকে অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল পদে নিয়োগের জন্য কোনও নির্দিষ্ট আইনজীবীকে চয়ন করার ক্ষমতা প্রদান করেছিল, শুধুমাত্র তাদের বিশেষজ্ঞতার ভিত্তিতে। সুনীল সামদারিয়া দাবি করেছিলেন যে এই সংশোধনটি বিশেষভাবে পদ্মেশ মিশ্রের নিয়োগকে সুবিধাজনক করার জন্য তৈরি হয়েছে, তবে আদালত এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে যে সংশোধনীটি একটি বৈধ প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এবং রাজ্য সরকার এটি যে কোনো সময় নীতি সংশোধন করতে পারে।

বিচারক বানসাল আরও একটি পূর্ববর্তী মামলার রায়ের উল্লেখ করেন, যেখানে রাজস্থান হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল পদে নিয়োগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছিল। সেই মামলায় বলা হয়েছিল যে, অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেলের পদটি কোনও সরকারি সেবা পদ নয়, যেখানে কঠোর সরকারি নিয়ম অনুসরণ করা প্রয়োজন, বরং এটি একটি বিশেষ আইনি পদ, যেখানে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া আলাদা হতে পারে। এই রায়টি মামলাটি বিশ্লেষণ করার সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং এটি নিশ্চিত করেছিল যে রাজ্য সরকার অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল পদে নিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট নীতির শর্ত পূর্ণ না করে সক্ষম হতে পারে।

একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল, সুনীল সামদারিয়া তার পিটিশনে দাবী করেছিলেন যে সংশোধনীটি অতি দ্রুত এবং অযথা প্রবর্তিত হয়েছে, এবং এটি শুধুমাত্র পদ্মেশ মিশ্রের নিয়োগের সুবিধার্থে করা হয়েছে। তবে আদালত এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে, বলেছে যে সংশোধনীটি কোনও ধরনের পক্ষপাতিত্ব বা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলস্বরূপ নয়। আদালত আরও বলেছে যে রাজ্য সরকার এই ধরনের সংশোধনী প্রবর্তনের মাধ্যমে একটি অধিক নমনীয় নিয়োগ প্রক্রিয়া তৈরি করেছে, যা শুধু বছরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নয়, আইনজীবীর দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেও নিয়োগের সুযোগ দেয়। আদালত এও উল্লেখ করেছে যে, মিশ্রের নিয়োগের সময় ঘটনার সিকোয়েন্স, যেখানে সংশোধনী প্রবর্তিত হয়েছিল, তা পক্ষপাতিত্বের প্রমাণ নয়।

অতিরিক্তভাবে, আদালত পিটিশনারের এক অভিযোগের উপর আলোকপাত করেছেন, যেখানে তিনি দাবি করেছিলেন যে, অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেলের নিয়োগের জন্য অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়নি, যা রাজস্থান রাজ্য লিটিগেশন নীতির ক্লজ ১৪.২ অনুযায়ী বাধ্যতামূলক ছিল। সুনীল সামদারিয়া দাবি করেছিলেন যে, মিশ্রের নিয়োগে অ্যাডভোকেট জেনারেলের পরামর্শ নেওয়া হয়নি, যা নীতির লঙ্ঘন। তবে আদালত এই অভিযোগও খারিজ করেছে এবং বলেছে যে, যদিও পরামর্শ নেওয়া একটি সাধারণ প্রক্রিয়া, তবে এটি মিশ্রের নিয়োগে কোনও বৈধতা বিঘ্নিত করেনি।

অবশেষে, রাজস্থান হাইকোর্ট পিটিশনটি খারিজ করে দেয় এবং পদ্মেশ মিশ্রের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল পদে নিয়োগের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে। আদালত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল যে পিটিশনারের যুক্তি অবাস্তব ছিল এবং রাজ্য সরকার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আইনানুগভাবে কাজ করেছে।

এই রায়টি কেবল রাজস্থানের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল পদে নিয়োগের বিষয়ে নয়, ভবিষ্যতে রাজ্য সরকারের আইনগত পদে নিয়োগের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। এটি রাজ্য সরকারের জন্য একটি উদাহরণ তৈরি করেছে, যা এটি প্রমাণ করেছে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রয়োজনীয় নীতির আওতায় থাকা সত্ত্বেও তাদের সক্ষমতা এবং কৌশলের মধ্যে নমনীয়তা থাকতে পারে। এছাড়া, এই রায়টি নিশ্চিত করেছে যে নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষজ্ঞতা, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, যা আইনি পেশার ক্ষেত্রে অধিকতর সক্রিয় এবং সাড়া দেওয়ার উপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

এটি আইনি পেশার ক্ষেত্রে একটি নতুন ধারা তৈরি করেছে, যেখানে রাজ্য সরকার আইনজীবীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এবং সেখানে নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও গ্রহণযোগ্য এবং অধিকতর মানসম্পন্ন হতে পারে।

Sani

Comments

Popular posts from this blog

Beautiful Living and Eco-Friendly Habits

বাংলা অঞ্চলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) অসুবিধা: সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে

On February 6, 2025, the Rajasthan High Court delivered an important judgment dismissing a petition that challenged the appointment of Padmesh Mishra as the Additional Advocate General (AAG) of Rajasthan