বাংলা অঞ্চলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) অসুবিধা: সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে
ভূমিকা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) সন্দেহাতীতভাবে ২১শ শতাব্দীর সবচেয়ে রূপান্তরমূলক প্রযুক্তিগত অগ্রগতি। শিল্প ব্যবস্থার মধ্যে বিপ্লব ঘটানো থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তন আনতে, AI ভবিষ্যতের সানন্দ এবং উদ্ভাবনী সম্ভাবনা প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে, এর প্রভাব সবসময় সম্পূর্ণ ইতিবাচক নয়। বাংলা, পৃথিবীর অনেক অংশের মতো, AI এর দ্রুত বিকাশের সাথে সাথে চমৎকার সুযোগের পাশাপাশি বড় বড় চ্যালেঞ্জও সামনে এনে দিয়েছে। যদিও AI এর মাধ্যমে উন্নতি আনার সম্ভাবনা রয়েছে, তবুও এটি কিছু জটিল সমস্যা উত্থাপন করছে, যা সঠিকভাবে সমাধান করা প্রয়োজন।
এই ব্লগ পোস্টে আমরা বাংলায় AI এর সম্ভাব্য অসুবিধাগুলি পরীক্ষা করব, এর প্রভাবগুলি বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন কর্মসংস্থান, শিক্ষা, নৈতিকতা এবং শিল্পের উপর কী হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করব। AI যদিও প্রতিশ্রুতিশীল, তবে এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে, এবং বাংলার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সমাজ-অর্থনৈতিক পরিবেশ এটিকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে সম্পর্কিত কিছু নেতিবাচক প্রভাব থেকে বিশেষভাবে দুর্বল করে তোলে।
১. কর্মসংস্থান এবং চাকরি হারানোর প্রভাব
AI এর সবচেয়ে আলোচিত এবং ভয়ঙ্কর অসুবিধা হলো এটি কর্মসংস্থানে কিভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলা, যেটি একটি বৈচিত্র্যময় শ্রমবাজারের জন্য পরিচিত, সেখানে স্বয়ংক্রিয়করণ এবং AI এর কারণে ব্যাপক চাকরি হারানোর ভয় বিশেষভাবে দৃঢ়। উৎপাদন, কৃষি, এমনকি সেবা খাতেও AI প্রযুক্তির আগমন ঐতিহ্যগতভাবে মানবকর্মীদের দ্বারা পূর্ণ কর্মগুলিকে পাল্টে দিয়ে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
যেমন, উৎপাদন খাতে রোবট এবং AI সিস্টেমগুলি ক্রমশ এমন কাজগুলো করতে সক্ষম হচ্ছে যা আগে মানব শ্রমিকরা করত, যেমন অ্যাসেম্বলি লাইন কাজ বা গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ। এই পরিবর্তনটি ব্যাপক বেকারত্বের কারণ হতে পারে, বিশেষত নিম্ন দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিকদের জন্য যারা ঐতিহ্যগতভাবে কারখানার চাকরির উপর নির্ভরশীল। বাংলা, যেখানে এখনও তুলা, ভারী যন্ত্রপাতি এবং ছোট মাপের উৎপাদন খাতগুলির মতো শিল্পগুলি প্রধান ভূমিকা পালন করে, AI সিস্টেমগুলি ম্যানুয়াল শ্রমকে স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া দিয়ে প্রতিস্থাপন করলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
একইভাবে, কৃষি খাতও, যা বাংলার বিপুল জনগণের জীবিকার প্রধান উৎস, AI দ্বারা ঐতিহ্যবাহী কৃষিকাজে বিপর্যস্ত হতে পারে। AI চালিত যন্ত্রপাতি এবং ড্রোনগুলি ফসলের স্বাস্থ্যের পর্যবেক্ষণ, সেচ অটোমেট করা এবং এমনকি ফসল তোলা পর্যন্ত করতে সক্ষম। এই পরিবর্তনটি দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করলেও, এর ফলে অনেক গ্রামীণ শ্রমিক বেকার বা আংশিকভাবে কর্মহীন হতে পারেন।
সেবা খাতগুলির মধ্যে যেমন খুচরা বিক্রয়, ব্যাংকিং, এবং গ্রাহক সহায়তা, AI প্রযুক্তির উত্থানও লক্ষণীয়। স্বয়ংক্রিয় গ্রাহক সেবা প্রতিনিধি, AI চালিত ব্যাংকিং সিস্টেম এবং এমনকি চ্যাটবটগুলির ব্যবহার ব্যবসায়ে সাধারণ হয়ে উঠছে। যদিও এই অগ্রগতিগুলি সুবিধা প্রদান করে, তবুও এটি ঐতিহ্যবাহী মানব-কেন্দ্রিক চাকরির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, যা বেকারত্বের হার আরও বাড়িয়ে দেয়।
এই খাতগুলিতে চাকরি স্থানান্তরের ঝুঁকি বাংলার জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ, কারণ অনেক শ্রমিকের কাছে AI চালিত নতুন প্রযুক্তিগত চাকরিতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা নেই। যথাযথ পুনঃপ্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের অভাব থাকলে, এই ব্যক্তিরা দীর্ঘমেয়াদী বেকারত্বের শিকার হতে পারেন, যা অর্থনৈতিক অসমতা এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
২. ডিজিটাল বিভাজন এবং প্রযুক্তির অ্যাক্সেস
বাংলা, যেমন ভারতের অনেক এলাকা, একটি বড় ডিজিটাল বিভাজনের মধ্যে রয়েছে। কলকাতার মতো শহরগুলিতে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি দ্রুত হয়েছে, তবে বাংলা অঞ্চলের গ্রামীণ অংশগুলিতে ডিজিটাল অবকাঠামো ব্যাপকভাবে অপর্যাপ্ত। AI এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ইন্টারনেট অ্যাক্সেস, ডিভাইস এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞানের উপর নির্ভর করে, এবং এই বিভাজন সমাধান না হলে, AI এর সুবিধাগুলি শুধুমাত্র শহুরে এলাকাগুলিতেই কেন্দ্রীভূত থাকতে পারে, গ্রামীণ জনগণ আরও পিছিয়ে পড়তে পারে।
বাংলায়, ডিজিটাল বিভাজনটি বিভিন্নভাবে দেখা যায়। প্রথমত, অনেক গ্রামীণ এলাকায় উচ্চ গতির ইন্টারনেটের অ্যাক্সেস এখনও সীমিত, যা মানুষের বা ব্যবসায়িকদের জন্য AI প্রযুক্তি পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করা কঠিন করে তোলে। এমনকি শহুরে এলাকাতেও ডিজিটাল সাক্ষরতার অভাব রয়েছে, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। অনেক ব্যক্তি এবং সম্প্রদায় AI সিস্টেমের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করার জন্য প্রস্তুত নয়, যা তাদের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সুবিধা গ্রহণ করতে সীমাবদ্ধ করে দেয়।
যেমন, AI চালিত শিক্ষা সরঞ্জামগুলি, যা বাংলায় শিক্ষার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে, তা গ্রামীণ স্কুলগুলির ছাত্রদের জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য নাও হতে পারে। তেমনি, AI চালিত স্বাস্থ্যসেবা, যা রাজ্যে স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে, সেগুলি দূরবর্তী অঞ্চলের জন্য পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং ডিভাইসের অভাবের কারণে তাদের জন্য অপ্রাপ্য হতে পারে।
ডিজিটাল বিভাজন এছাড়াও বৈষম্য বাড়িয়ে দেয়। ধনী ব্যক্তিরা এবং শহুরে ব্যবসায়ীরা AI গ্রহণ করতে এবং এর সুবিধা লাভ করতে বেশি সক্ষম, যখন গরীব সম্প্রদায় পিছিয়ে পড়ে। AI এর সুবিধার এই অসম বণ্টন সমাজের এবং অর্থনীতির মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্যকে আরও গভীর করতে পারে, যা প্রান্তিক জনগণের জন্য সুযোগ এবং সম্পদের অ্যাক্সেস কঠিন করে তোলে।
Comments
Post a Comment
if u have a doubt the contact with me.